Add

স্তন (ব্রেস্ট) ক্যান্সার কি? স্তন (ব্রেস্ট) ক্যানসার কেন হয়? স্তন (ব্রেস্ট) ক্যান্সারের লক্ষণ: Breast Cancer:

 স্তন ক্যান্সার কি?




 স্তন ক্যান্সার হল এমন একটি রোগ যেখানে স্তনের কোষগুলি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেড়ে যায়। বিভিন্ন ধরণের স্তন ক্যান্সার রয়েছে। স্তন ক্যান্সারের ধরন নির্ভর করে স্তনের কোন কোষগুলি ক্যান্সারে পরিণত হয় তার উপর। স্তনের বিভিন্ন অংশে স্তন ক্যান্সার শুরু হতে পারে। একটি স্তন তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত: লবিউল, নালী এবং সংযোগকারী টিস্যু। লোবিউল হল সেই গ্রন্থি যা দুধ উৎপাদন করে। নালীগুলি হল টিউব যা স্তনবৃন্তে দুধ বহন করে। সংযোজক টিস্যু (যা আঁশযুক্ত এবং চর্বিযুক্ত টিস্যু নিয়ে গঠিত) চারপাশে এবং সবকিছু একসাথে ধরে রাখে। বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সার নালী বা লোবিউলে শুরু হয়। 

স্তন ক্যান্সার স্তনের বাইরে রক্তনালী ও লিম্ফ ভেসেলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। যখন স্তন ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তখন বলা হয় মেটাস্টেসাইজড। বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়েয় চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হারও। স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা কোষ-রস ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার। 

 ব্রেস্ট ক্যান্সারের ৮টি লক্ষণ:

 ১। এ রোগের অন্যতম লক্ষণ হিসাবে স্তনে একটি চাকার আকৃতি দেখা দিতে পারে। অনেকে স্তনের বোঁটায় ঘা বা ক্ষত বা বোঁটার চারপাশে কালো অংশে চুলকানির লক্ষণ দেখা দেয়। 

 ২। স্তনের ত্বকে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। যেমন: চামড়া কুঁচকে যাওয়া, কমলার খোসার মত ছোট ছোট ছিদ্র দেখা দেয়া, চামড়ায় টোল পড়া, দীর্ঘস্থায়ী ঘা ইত্যাদি। 

 ৩। কোন কোন সময় স্তনের বোঁটা দিয়ে দুধের মত সাদা রস নিঃসৃত হতে থাকে। ব্যথা বা স্তন লাল রং হয়ে গেছে এমন লক্ষণ নিয়ে খুব কমই আসেন। 

 ৪। নিপল (বোঁটা) দিয়ে রস নিঃসরণ হওয়া পাশাপাশি মাঝেমধ্যে রক্তপাত হওয়র সম্ভাবনা থাকে। 

 ৫। স্তনের বোটা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া অথবা বোটা দিয়ে পুঁজ নির্গত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। 

 ৬। মাঝেমধ্যে দেখা যায় স্তনে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা অনুভূত হয়। 

 ৭। স্তনের আকারের বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যেতে পারে। 


 স্তন ক্যানসার কেন হয়? 

 নানা কারণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে। 

 ১।বর্তমানে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেটি একটি কারণ হতে পারে। এছাড়া কারো পরিবারে বংশগত স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে তার প্রভাবে হতে পারে। যদি বারো বছরের আগে ঋতুস্রাব হয় এবং দেরিতে মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হয়, তারাও এ রোগের ঝুঁকি থাকে। সেই সঙ্গে তেজস্ক্রিয় স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। 

 ২। দেরিতে সন্তান নিলে আবার যাদের সন্তান নেই, বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় না, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণীজ আমিষ বেশি রাখেন ও প্রসেস্ ফুড বেশি বেশি খান, এবং যদের ওজন অতিরিক্ত তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি হয়ে থাকে। 

 ৩। দীর্ঘদিন ধরে যারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল বা যন্ম নিয়ন্ত্রনের ওয়ান টাইম ওষুধ খেয়ে থাকেন বা হরমোনের ইনজেকশন গ্রহন করেন তাদের এ রোগর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। 

 ৪। বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি তারা এ রোগের অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। 

 কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন? 

 ১। স্তনের বোঁটার কোন ধরনের পরিবর্তন, যেমন ভেতরে ঢুকে গেলে, অসমান বা বাঁকা হয়ে গেলে ছোট হয়ে আসছে ইত্যাদি।

 ২।স্তনের বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রস নির্গত হলে। 

 ৩।স্তনের চামড়ার রং বা চেহারায় পরিবর্তন হলে। 

 ৪। স্তনে ছোট ছোট দাগ বা চাকা দেখা দিলে। তাছাড়া বয়স ৩০ বা ৩৫ হবার পর একজন নারীর উচিত নিয়মিত স্তন একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করে দেখা। 

 এজন্য মূলত তিনটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। 

          ১। ম্যামোগ্রাম বা বিশেষ ধরনের এক্স রে, যার সাহায্যে স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন চিহ্নিত করে। 

          ২। সুনির্দিষ্ট নিয়মে চাকা বা পিণ্ড আছে কিনা, চিকিৎসকের মাধ্যমে সে পরীক্ষা করানো। 

          ৩। নিজে নিজে নির্দিষ্ট নিয়মানুযায়ী স্তন পরীক্ষা করা। (ডাক্তার পরামর্শ দিবেন) 


মনে রাখবেন, ব্রেস্টে যে কোন ধরনের পিন্ড বা চাকা মানেই কিন্তু ব্রেস্ট ক্যান্সার নয়। আর এটি নিরাময়যোগ্য। তাই আপনি চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই আপনার রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। সচেতনতা ও সঠিক সময়ে চিকিৎসায় পারে এ রোগ থেকে সুরক্ষা ও দ্রুত রোগমুক্তি দিতে।

Post a Comment

0 Comments