Add

ব্যাকটেরিয়া কী? ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল, উপকারিতা ও অপকারিতা:

ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে নানা তথ্য: 


ব্যাকটেরিয়া

ছবি: সংগ্রহীত।

ব্যাকটেরিয়া কী? 

ব্যাকটেরিয়া হলো এক ধরনের ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস যুক্ত এককোষী আণুবীক্ষণিক জীব। এটি সাধারণত ক্লোরোফিল বিহীন এবং প্রধানত দ্বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। আনুমানিক ৩৬০ কোটি বছর পূর্বে আর্কিওজয়িক যুগে এই আদিকোষী জীবের উৎপত্তি ঘটেছিল। এ জীব প্রচন্ড ঠান্ডায় -১৭ ডিগ্রী থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাঁচে থাকতে পারে।


ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল:

সাধারণত ব্যাকটেরিয়া মাটিতে, পানিতে, বাতাসে, জীব দেহের বাইরে এবং ভেতরে অর্থাৎ প্রায় সব জায়গায় থেকে থাকে। এমনকি মানুষের অন্ত্রে ও ব্যাকটেরিয়া বাস করে তাকে। 

মানুষের শরীরে ভিটামিন-B Complex  যোগান দিয়ে থাকে Escherichia coli (E. coli) নামের এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া। যে স্থানের মাটিতে জৈব পদার্থ  বেশি থাকে সাধারণত সে মাটিতে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। তবে মাটির গভীরে জৈব পদার্থের পরিমান যেমন কম  তেমন ব্যাকটেরিয়ার পরিমানও অনেক কম থাকে। যে জলাশয়ে জৈব পদার্থের পরিমান  বেশি যে জলাশয়ে ব্যাকটেরিয়ার পরিমানও অনেক বেশি থাকে। বাতাসের একটা স্তর পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে। এক গ্রাম মাটিতে প্রায় ৪০ মিলিয়নের মতো ব্যাকটেরিয়া  ও এক মিলিমিটার মিঠাপানিতে প্রায় এক মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া থাকে।


ব্যাকটেরিয়া সাধারণত উপকার অপকার দুধরণের কাজই করে থাকে। 

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রদান করা হলো। 

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা:

১। প্রতিষেধক টিকা তৈরিতে: অনেক প্রকার ব্যাকটেরিয়া থেকে কলেরা, যক্ষা, টাইফয়েড, ডিপথেরিয়া, রোগের টীকা অথবা ঔষধ তৈরি করা হয়। তাছাড়া ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ও ধনুষ্টংকার রোগের ঔষধ ও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়। 

২। অ্যান্টিবায়োটিক তৈরিতে: ব্যাকটেরিয়া থেকে  সাবটিলিন Bacillus sutilis থেকে - পলিমিক্সিন , Bacillus polymyxa থেকে - স্ট্রেপটোমাইসিন, Actinomycetes থেকে আরও অনেক প্রকারজীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হয়।

৩। কৃষিক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা : মাটির উর্বর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, নাইট্রোজেন সংবন্ধনে, পতঙ্গ নিধন করতে ও ফলন বৃদ্ধিতে। ব্যাকটেরিয়া অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে।

৪। মানবদেহে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার: মানবদেহে ভিটামিন তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়। E.coli ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ভিটামিন -B, ভিটামিন-K, ভিটামিন-B2, বায়োটিন, ফলিক এসিড ইত্যাদি তৈরি করে ও সরবরাহ করে।

৫। শিল্পক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া কাজ: দুগ্ধজাত শিল্পে দুগ্ধ বৃদ্ধি করতে, পাটশিল্পে পাটের ফলন বাড়াতে ও চা, কফি ও তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যাকটেরিয়া ভূমিকা রাখে। তাছাড়া চামড়াশিল্পে, জৈব গ্যাস তৈরিতে, টেস্টিং লবণ তৈরি করতে অনেক বেশি কাজ করে থাকে।

৬। পরিবেশ রক্ষায়: আবর্জনা পচনে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা অনেক। তাছাড়া তেল নিস্কাশনে ও বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৭। সেলুলোজ হজমে : গবাদি পশু ঘাস, খড় প্রভৃতি খেয়ে থাকে। যার প্রধান উপাদান হলো সেলুলোজ। গবাদি পশুর অন্ত্রে অবস্থিত এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া সেলুলোজ হজম করতে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে। যার মাধ্যমে পশুর হজমক্রিয়া ভালো হয়। 


ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা:

১। খাদ্যদ্রব্যের পচন তৈরি ও বিষাক্ত করে: এটি খাদ্য দ্রুত পচতে সাহায্য করে। এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া  আছে যা খাদ্যে বিষাক্ততা সৃষ্টি করে থাকে। যা খেয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

২। মানুষের রোগ সৃষ্টি করে: মানুষের বিভিন্ন রোগ যেমন: কলেরা, যক্ষ্মা, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, ডিপথেরিয়া, আমাশয়, ধনুষ্টংকার বা টিটেনাস, হুপিং কাশি ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। তাছাড়া সিফিলিস, গনোরিয়া, এনথ্রাক্স, মেনিনজাইটিস, লেপরসি বা কুষ্ঠরোগ, আনডিউলেটেড ফেভার ইত্যাদি রোগের অন্যতাম কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া।  

৩। অন্যান্য পশুপাখির রোগ সৃষ্টি করে: বিভিন্ন পশুপাখির রোগ সৃষ্টির জন্য ব্যাকটেরিয়া অনেকাংশে দ্বায়ী।  যেমন: গরু-মহিষের যক্ষা, ভেড়ার এনথ্রাক্স, ইদুরের প্লেগ, হাস-মুরগির কলেরা,    আনডিউলেটেড ফেভার, গিলাফোরা রোগ ইত্যাদি রোগও ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়ে থাকে।

৪। উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টি করে: ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন উদ্ভিদের যেমন: গমের টুন্ডুরোগ, ধানের পাতা ধবংসা,  লেবুর ক্যাংকার, আলুর স্ক্যাব,আখের আঠা ঝরে পড়া, আপেলের ফায়ার ব্লাইট, ভুট্টার বোটা পচা , টমেটোর ক্যাংকার, তামাকের ব্লাইট, সিমের লিফ স্পট রোগ ব্যাকটেরিয়া কারণে হয়ে থাকে।

৫। ঘরের ব্যবহারের জিনিস ক্ষতিসাধন করে: ব্যাকটেরিয়া ঘরের কাপড়-চোপড়, কাঠের আসবাবপত্র সহ অনেক দ্রব্যের ক্ষতিসাধন করে।

৬। পানি দূষণ করে: কলিফর্ম  নামের এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া থাকে যা সাধারণত মল দিয়ে পানি দূষিত করে ও তা পানের অযোগ্য করে থাকে।

৭। মাটির উর্বরতা বিনষ্ট করে: কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যা মাটিস্থ নাইট্রোজেন কে ভেঙে ফেলে ও তা মুক্ত নাইট্রোজেনে পরিণত করে। যার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস করে। যার কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যায়।

সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার আমরা এ সকল উপকার ও অপকার করে থাকে।


আরও পড়ুন: 

স্টোক কেন হয়? Why do strokes happen?




Post a Comment

0 Comments